সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলা সদর উপজেলার চর ভেদুরিয়া গ্রামের কিশোর মো. মাহফুজ। বাবা মো. ফয়েজ উদ্দিন জেলে হলেও ছেলের স্বপ্ন ছিল আরো বড় হওয়ার। পড়াশুনা শেষ করে বিনা পয়সায় গরিবের চিকিৎসা করার স্বপ্ন দেখেছিল মাহফুজ। কিন্তু তার স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিলো দুর্ঘটনা। পা হারিয়ে এখন সে পরিবারের বোঝা।
মাহফুজের চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমি ও বসতভিটা সব বন্ধক রেখেছে পরিবার। ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসায় প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে নিঃস্ব বাবা ফয়েজ উদ্দিন। দেনাদারদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তবু ছেলেকে সুস্থ দেখার আশা ছাড়ছেন না।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে যাচ্ছিল মাহফুজ। ওই সময় একটি দ্রুতগামী অটোরিকশা তাকে চাপা দেয়। এতে তার দুই পা ভেঙে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতাল, পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় মাহফুজকে। সেখানে দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় বাম পা ভালো হলেও ডান পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় এখনো সুস্থ হতে পারেনি সে। বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসকরা জানান তিন লাখ টাকা খরচ করে কৃত্রিম হাড় সংযোগ করতে হবে। তবেই মাহফুজ আবার স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারবে।
মাহফুজ বলে, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি বাবা-মা না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন। আমাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। আমি বড় হয়ে একজন ডাক্তার হয়ে দেশের গরিব মানুষকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিতে চেয়েছিলাম। একটি দুর্ঘটনায় সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সে আরো বলে, আমার চিকিৎসার জন্য বাবা অনেক টাকা ধারদেনা করেছেন। এখন চিকিৎসা তো দূরের কথা, ঠিকমতো খেতেই পাই না। মাঝেমধ্যে শুধু লবণ-ভাত খেয়েও দিন কাটাচ্ছি। আমি স্বাবাভিক জীবনে ফিরতে চাই, বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
মাহফুজের বাবা মো. ফয়েজ উদ্দিন বলেন, তিন ছেলে-এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার সংসার। মাছ ধরে কোনো রকমে জীবন কাটাই। পয়সার অভাবে বড় ছেলে সবুজ ও ছোট ছেলে ফিরোজ পঞ্চম শ্রেণির পর পড়তে পারেনি। মেজ ছেলে মাহফুজ নবম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে সাথি সপ্তম শ্রেণিতে পড়লেও টাকার অভাবে তা বন্ধ হতে বসেছে। এর মধ্যে মাহফুজের চিকিৎসার জন্য বাবার রেখে যাওয়া ৮ শতাংশ জমি বিক্রি ও বসতঘর বন্ধক রেখে এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। যা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক তিন লাখ টাকা খরচ করে কৃক্রিম হাড় লাগাতে বলেছেন। তাহলেই মাহফুজ আগের মতো হাঁটাচলা করতে পারবে। কিন্তু সেই টাকা জোগাড় করা আমার জন্য অসম্ভব। ছেলের চিকিৎসার জন্য আমি বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চাই।
ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওই পরিবারটি আমাদের কাছে কখনো আসেনি। মাহফুজের পরিবার আবেদন করলে হয়ত সরকারিভাবে ১০-১৫ হাজার টাকা সহযোগিতা দেয়া সম্ভব হতে পারে।
Leave a Reply